1. admin@pathagarbarta.com : admin :
শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সনাতন-দীননাথ : আপন আলোয় উদ্ভাসিত বৃটেনের কার্ডিফ বাংলা স্কুল প্রতি শনিবার ও রোববার খোলার সিদ্ধান্ত   প্রসঙ্গ : স্থানীয় সরকারের সার্কেল পদ্ধতি ও সরপঞ্চ ব্যবস্থা বইপাঠ প্রতিযোগিতার সনদ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত মেধাবিকাশ গণগ্রন্থাগারে পাঠচক্র অনুষ্ঠিত বেসরকারি গণগ্রন্থাগারের অনুদানের জন্য দরখাস্ত আহবান একজন এনামুল হাবীব ও আমাদের গ্রন্থাগার কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে- ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্মূল কমিটির যৌথ সভা কোটা আন্দোলনকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী স্লোগানের নিন্দা জানিয়েছে জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকে সমাজকর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সংবর্ধনা

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় : বিজ্ঞানী না সমাজ সংস্কারক

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২
  • ১৪৫ বার পঠিত

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় : বিজ্ঞানী না সমাজ সংস্কারক

লেখা শুরু করার আগে বলে নেই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষটি সম্পর্কে আমার সেজদাদু। আমার বাবা ছিলেন ওনার ছোটভাই পূর্ণচন্দ্র রায়ের পুত্র। বর্তমানে বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছি থানার রাড়ুলী গ্রামে দাদুর জন্ম হয়েছিল, ১৮৬১ সালের ২রা আগস্ট তারিখে অর্থাৎ আজকের দিনে। এই লেখার মাধ্যমে তাঁর তৃতীয় প্রজন্মের শ্রদ্ধাঞ্জলি৷

ওনার বাবা হরিশচন্দ্র রায় ছিলেন বিদ্যানুরাগী মানুষ। গ্রামের পাঠশালাতে উচ্চশিক্ষা সম্ভব নয় বলে তিনি নিজের খরচে একটি স্কুল বানিয়ে দিলেন এবং সেখানেই ছেলেদের পড়াশোনার সুব্যাবস্থা গড়ে উঠলো। তারপরে ভাবলেন মেয়েরা কি চিরদিন অন্তঃপুরবাসিনী হয়ে থাকবে? নিজের নামটাও কি তারা সই করতে পারবে না! তাই মেয়েদের জন্য আলাদা করে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন তিনি, নাম রেখেছিলেন ‘ভুবনমোহিনী বিদ্যালয়’।

যে স্কুলটি ছেলেদের জন্য তৈরি করেছিলেন, সেজদাদু সেই স্কুলেই ভর্তি হলেন। ন’ বছর বয়স পর্যন্ত এই স্কুলের আঙিনাতে তিনি বড় হয়েছিলেন। ১৮৭০ সালে সপরিবারে হরিশচন্দ্র চলে এলেন শহর কলকাতায়। পিছনে পড়ে রইল কপোতাক্ষ তীরে গ্রামের নিশ্চিন্ত জীবন। তখন রাড়ুলি গ্রামের ঘাট থেকে স্টীমার সরাসরি কোলকাতার আউটরাম ঘাটে ভিড়ত। স্বদেশী আন্দোলনের উন্মত্ত চেতনার মহালগ্নে ১৩২ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রীটের এক বাড়িতে এসে তাঁরা ভাড়া করে উঠলেন। বড়ো দাদু জ্ঞানেন্দ্র ভর্তি হয়েছিলেন হিন্দু স্কুলে, মেজো দাদু নলিনীকান্ত আর সেজো প্রফুল্ল এলেন হেয়ারে। আমার নিজের দাদু তখনও ছোট।

আমাশয় ভোগা শীর্ণ প্রফুল্লচন্দ্র এন্ট্রান্সে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। আই এস সি পড়াকালীন তিনি যখন প্রখ্যাত”গিলক্রিস্ট স্কলারশিপ” এর জন্য পড়াশুনা করছেন তখন সহপাঠীরা অনেকেই ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছিলেন। কিন্তু ভারতবর্ষ থেকে যে দুজন মাত্র ঐ বৃত্তি পেয়েছিলেন, প্রফুল্লচন্দ্র তাদের একজন। গিলক্রিস্ট স্কলারশিপ নিয়ে তিনি সাগর পেরিয়ে চলে এলেন এডিনবার্গ। সেখানকার ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথমে বিএসসি ও পরে ডিএসসি(Doctor of science) পাশ করেন।1889 সালে দেশে ফিরে আড়াইশো টাকায় প্রেসিডেন্সী কলেজে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরে তার বেতন সেসময়ে হাজার টাকা হলেও মাত্র একশো টাকা নিজের জন্য রেখে বাকী টাকা সহায় সম্বলহীন, দুস্থ, বিধবা এদের দান করতেন।

এই সময় তিনি সায়েন্স কলেজের দোতলার একটি ঘরে ছাত্র কাম ভাইপো চারুচন্দ্র মানে আমার বাবাকে নিয়ে থাকতেন। পাশের ছোট ঘরে ছিল তার ল্যাবরেটরী। দুজনেই একসাথে প্রেসিডেন্সী কলেজে যেতেন যথাক্রমে শিক্ষক ও ছাত্র হিসেবে। প্রেসিডেন্সী কলেজেও তার কেমিষ্ট্রির ল্যাবরেটরি ছিল। এখানেই তিনি বিষম ধাতু অর্থাৎ মারকিউরাস নাইট্রেট সহ কয়েকটি জৈব যৌগ(Organic compound) আবিস্কার করেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি দিলে বন্ধু রবীন্দ্রনাথ সেটিকে বাংলায় ‘আচার্য্য’ নামে অভিহিত করেন। এছাড়াও আরো অনেক সম্মানে ভূষিত হন তিনি, CIE, FNI, FRASB, FIAS, FCS ইত্যাদি। সবগুলোর মানেও জানিনা !

অসংখ্য বিদেশী ডিগ্রিধারী হলেও মানুষটি ছিলেন মনে প্রানে স্বদেশী । একটি খাদির ধুতি, কখনও বা সাদা প্যান্ট ও খাদির তৈরি কালো কোট পরে তিনি কলেজে পড়াতে যেতেন। তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ,ফজলুল হক প্রমুখ। আরেক ছাত্র রসায়নবিদ রাজশেখর বসু, সাহিত্য জগতে যিনি ‘পরশুরাম’ নামে খ্যাত। বেঙ্গল কেমিক্যালস কারখানা স্থাপনে বিশেষ সহায়তা করেছিলেন। অত্যন্ত সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন তিনি। ইচ্ছে করলে কোলকাতায় একটি বাড়ি তৈরি করতে পারতেন, কিন্তু থাকতেন বেঙ্গল কেমিক্যালের মানিকতলার একটি ছোট ঘরে। কখনও আবার কারখানার পানিহাটি শাখার একটি ঘরে। বিলাসিতা বলতে শুধু একটি ফিটন গাড়ি কিনেছিলেন। প্রিয় শিষ্য এবং ভাইপো চারুচন্দ্রকে নিয়ে বিকেলে ঐ গাড়িতে মাঝেমধ্যে গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে যেতেন।

……..ছাত্রদের নিয়ে দেশের বাড়ি রাড়ুলিতে যেতেন কখনও গরমের ছুটিতে কখনও বা পুজোর সময়। বাড়ির চন্ডীমন্ডপে ধূমধাম করে দুর্গাপুজা হত। গরমকালে বিকেলে বাগানের মিষ্টি আম তাকে ও ছাত্রদের কেটে দেওয়া হতো, সাথে মাখা সন্দেশ। এইসময় গ্রামবাসীরা দেখা করতে এলে তিনি বিভিন্ন ফলের স্বাদযুক্ত সিরাপ তাদের খাওয়াতেন। সবাই অবাক হত ফল নেই তাও ফলের স্বাদ! সকালে কাঠের বারকোষে ছাত্রদের জন্য আসতো ঘিয়ে ভাজা লুচি, নারকোল দিয়ে ছোলার ডাল। তিনি খেতেন শসা আর ঘোল। দুপুরে বাড়ির পুকুরে ধরা টাটকা পোনা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত। খাবার শেষে অন্দরমহলে মা ভুবনমোহিনীর সাথে তার সেজ ছেলে আদরের “ফনু” নানা সুখদুঃখের কথা বলতেন। তবে সকালে ছটা থেকে নটা তিনি পড়ার ঘরে নিমগ্নচিত্তে পড়াশুনা করতেন। এই সময় কেউ তাকে বিরক্ত করলে চলবে না। একবার গরমের বিকেলে ছাত্রদের নিয়ে কপোতাক্ষ নদীতে বেড়াতে গেছেন। কালবৈশাখীর ঝড়ে নৌকা উল্টে গেলো, তবে সবাই সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছিলেন। এ সমস্ত কথা আমি আমার বাবা চারুচন্দ্র রায়চৌধুরী ও ঠাকুরমা মানে আচার্য্য দেবের ছোট ভাই পুর্ণচন্দ্রের স্ত্রীর কাছে শুনেছি।

অধ্যাপনা ছাড়াও তার দুই খন্ডে,”হিষ্ট্রি অফ হিন্দু কেমিষ্ট্রি” বই এদেশে রসায়ন চর্চ্চার দলিল হিসেবে স্বীকৃত। বাঙালিকে ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করবার জন্য তিনি লেখেন,’বাঙালির অন্নসমস্যা ও তার প্রতিকার’ বইটি। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহনের পরে ব্যবসায় উৎসাহ দিতে তিনি নিজে প্রতিষ্ঠা করেন,”বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং সেটি লাভজনক ভাবে পরিচালনা করেও দেখিয়েছেন।
1921 সাল থেকে 1936 সাল পর্যন্ত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে তিনি সেই আমলে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা পেয়েছিলেন, তার পুরোটাই কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে যান। তার “বেঙ্গল কেমিক্যালস” প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ তিনি কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন।

আমার ছোটবেলা রাড়ুলির ঐ বাড়িতে কেটেছে। সেজদাদু তার বাবা হরিশ্চন্দ্রের নামে গ্রামে হাইস্কুল স্থাপন করেন। ভাইপো চারুচন্দ্রকে (আমার বাবা) সেই স্কুলের শিক্ষকতার দায়িত্ব দিয়ে যান। মা ভুবনমোহিনীর নামেও একটি মেয়েদের স্কুল তো ছিলই, এছাড়া বাগেরহাটে একটি কলেজ স্থাপন করেন। সবগুলিই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আজও সেখানে চলছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় আমরা এপার বাংলায় চলে আসতে বাধ্য হই।

আজ পূণ্য জন্মদিনে সেজ ঠাকুর্দা মশায়কে এক উত্তরসূরীর সশ্রদ্ধ প্রণাম! ‌

রচনা: শিখা সেনগুপ্ত(রায়চৌধুরী)
সম্পাদনা: স্বপন সেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!