1. admin@pathagarbarta.com : admin :
শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সনাতন-দীননাথ : আপন আলোয় উদ্ভাসিত বৃটেনের কার্ডিফ বাংলা স্কুল প্রতি শনিবার ও রোববার খোলার সিদ্ধান্ত   প্রসঙ্গ : স্থানীয় সরকারের সার্কেল পদ্ধতি ও সরপঞ্চ ব্যবস্থা বইপাঠ প্রতিযোগিতার সনদ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত মেধাবিকাশ গণগ্রন্থাগারে পাঠচক্র অনুষ্ঠিত বেসরকারি গণগ্রন্থাগারের অনুদানের জন্য দরখাস্ত আহবান একজন এনামুল হাবীব ও আমাদের গ্রন্থাগার কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে- ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্মূল কমিটির যৌথ সভা কোটা আন্দোলনকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী স্লোগানের নিন্দা জানিয়েছে জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকে সমাজকর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সংবর্ধনা

চলুন যাই সিকিমে

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২
  • ১২৬ বার পঠিত

চলুন যাই সিকিমে
লিয়াকত হোসেন খোকন

পশ্চিম বাংলার শীর্ষে হিমালয়ের কোলে ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য সিকিম। পাহাড়ি রাজ্য সিকিমের দক্ষিণে বাংলার দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা। উত্তরে চীনের তিব্বত। পশ্চিমে নেপাল আর পূর্বে তিব্বত আর ভুটান।

পার্বত্য রাজ্য সিকিমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলনাহীন। উত্তরভাগে প্রহরীরূপে দণ্ডায়মান পাঁচ শিখরের তুষারশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর খরস্রোতা তিস্তা নদী নেমে আসছে পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে দুরন্ত গতিতে সিকিম দিয়ে। আর রঙ্গীত ও রোটাং এই দুই পাহাড়ি নদীও প্রবাহিত হচ্ছে পশ্চিম সিকিমে। এরই মাঝে সবুজ অরণ্য পাহাড়ের কোলে কোলে ২৫০ প্রজাতির অর্কিড, ২০০ রকমের ফার্ন ও পাতাবাহারি গাছগাছালি ছাড়াও মধুমাসে রং-বেরঙের ম্যাগনোলিয়া, রডোডেনড্রন, অ্যালপাইন ও ৬০০ রকমের হিমালীয় বুনো ফুলের সমারোহ সাজিয়ে তোলে সিকিমের প্রকৃতিতে। চলার পথে দু’চোখ ভরে দেখে নেওয়া যায় সিকিমের সৌন্দর্য।

প্রকৃতির মতন সিকিমের ইতিহাসও বৈচিত্র্যময়। ১৮ শতক পর্যন্ত লেপচারাই ছিল এখানকার অধিবাসী। ৮ শতকের কোনো এক সময়ে লেপচারা আসামের এক অংশ থেকে সিকিমে এসে বসবাস শুরু করে। এরপর আসে মেষপালক ভুটিয়ারা। আর ১৬৪১ সালে লাসার লামারা তান্ত্রিক মহাযান বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করে এদের। আর ১৬৪২ সালে পেনচু নামগিয়ালকে গিয়ালপো অর্থাৎ রাজা বানায়। ১৮ শতকে নেপালি ও ভুটানিরা বারে বারে হানা গিয়েছে সিকিমে। জনবসতিও গড়ে তোলে এরা।আর ১৯ শতকে ব্রিটিশ আসে হিমালয়ে। ১৮১৪-র অ্যাংলো-নেপালি যুদ্ধে সিকিমরাজ ব্রিটিশের পক্ষ নেয়। নেপালকে পরাজিত করে ব্রিটিশরা সিকিম-নেপাল সীমান্ত নির্ধারণ করে দেয়। পরে ১৮৩৫ সালে এক কৌশলময় চুক্তির ফলে দার্জিলিং জেলা উপহাররূপে পেয়ে যায় ব্রিটিশরা সিকিম রাজার কাছ থেকে। আবার সিকিমের সাথে বিরোধও বাধে ব্রিটিশদের। সাম্রাজ্যলিপ্সু ব্রিটিশ সৈন্য পাঠায় সিকিমে। অধীনতামূলক চুক্তি করিয়ে সিকিমকে পরিণত করে ব্রিটিশ ভারতের আশ্রিত রাজ্যে। রাজা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করত ব্রিটিশ-ভারত অতীতে। স্বাধীনতার পরও এই প্রথা বলবৎ ছিল। আর ১৯৭৩ সালে সিকিমের শেষ রাজা চোগিয়ালের শাসনের অবসান হয় জন-বিদ্রোহে। ১৯৭৪ সালে হয় নির্বাচন। আর ১৯৭৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিকিম গণপরিষদের ইচ্ছেতে আশ্রিত রাজ্য থেকে ২২তম ভারতীয় রাজ্যে পরিণত হয় সিকিম।
সিকিম ভ্রমণে এখন আর কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে নাথুলা-পাস ও জেলিপ-লা পাস অর্থাৎ পূর্বে তিব্বত সীমান্তসংলগ্ন সিকিম ও উত্তর সিকিম ভারতীয় ও বিদেশি দুয়ের কাছেই নিষিদ্ধ ছিল এই কিছুদিন আগেও ।

সিকিম শব্দের অর্থ সুখের ঘর। বাস্তবিকই নির্ঝঞ্জাট রাজনৈতিক পরিবেশ, অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা এবং খুব কম দূরত্বের জন্য সিকিম বাঙালির প্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ১৯৭৫ সালের ২৬ শে এপ্রিল সিকিম ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে সংযোজিত হয়।
সিকিমের উত্তরে তিব্বত, পূর্বে তিব্বত ও ভুটান, পশ্চিমে নেপাল। তাই প্রতিরক্ষার দিক থেকেও সিকিম রাজ্যের অশেষ গুরুত্ব। নাথুলা সীমান্ত দিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য শুরু হওয়ার পর এই গুরুত্ব আরও বেড়েছে। সিকিমের দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা। সিকিমের এক দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, নরসিং, কাবরু, রাথোং, সিনিয়লচু প্রভৃতি হিমালয়ের বিখ্যাত শৃঙ্গের শোভা, অন্যদিকে গুরুদোংমার, ছাঙ্গু, খেচিপেরি প্রভৃতি অসাধারণ সরোবর। রুমটেক, পেমিয়াংশি, রালং প্রভৃতি বিখ্যাত মনাস্ট্রিও সিকিমের বিশেষ আকর্ষণ। চারটি জেলা নিয়ে গঠিত পুরো সিকিম রাজ্যটি পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ। ছুটির মেয়াদের ভিত্তিতে পর্যটকেরা তাদের গন্তব্য ঠিক করে নিতে পারেন এই চারটি জেলার মধ্য থেকে।

গ্যাংটক :
গ্যাংটক সিকিমের রাজধানী শহর। উঁচ্চতা ৫,৫০০ ফুট। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গ্যাংটকের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। প্রচুর হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া, কিউরিও শপ, দোকানপাট সব মিলিয়ে জমজমাট। শহরের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে এম জি মার্গ, যার এক দিকে জনবহুল লালবাজার আর অন্যদিকটি গিয়ে মিশেছে পালজোর স্টেডিয়াম রোডের সঙ্গে। শহরের মধ্যেই রয়েছে এনচে মনাস্ট্রি। প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসে এখানে ধর্মীয় মুখোশনৃত্য ‘ছাম’ অনুষ্ঠিত হয়। আকাশপথে গ্যাংটক শহরকে দেখার জন্য রোপওয়ের ব্যবস্থা আছে। রোপওয়ে চলে দেওয়ালি বাজার থেকে নামনাং জিপস্ট্যান্ড হয়ে শহরের মাথায় সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং পর্যন্ত। পর্যটকেরা গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিতে পারেন গ্যাংটকের আশপাশের দ্রষ্টব্যগুলো। গ্যাংটকের ২৪ কিলোমিটার দূরেই বিখ্যাত রুমটেক গুম্ফা। ১৭১৭ সালে নির্মিত এই সুন্দর গুম্ফাটিতে তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন গাথা ম্যুরালে রূপ পেয়েছে। এই পথেই পর্যটকেরা দেখে নিতে পারেন রাংকা গুম্ফা, ছোট্ট গ্রাম সাং ও তিনতালে। গ্যাংটক পাহাড়ের বিপরীত ঢালে অবস্হিত তিনতালে থেকে সন্ধ্যাবেলায় আলো ঝলমলে গ্যাংটকের শোভা অনবদ্য। এছাড়া অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে চোগিয়াল রাজাদের রাজবাড়ি, ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজি, অর্কিড হাউস, ডিয়ার পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সারামসা গার্ডেন, বন-ঝাকরি ঝরনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাশি, গণেশ টক, হনুমান টক প্রভৃতি ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও সিনিয়লচু শৃঙ্গের অপরূপ শোভা দেখা যায়।

প্রকৃতিপ্রেমীরা এছাড়া যেতে পারেন ফ্যামবং-লো অভয়ারণ্যে। উচ্চতা ৭,০০০ ফুট। গ্যাংটক শহর থেকে দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। গাড়ির রাস্তা থেকে দু-কিলোমিটার মতো হেঁটে পৌঁছানো যায় এই অভয়ারণ্যে। এখানে রেড পান্ডা, ভালুক, বার্কিং ডিয়ার, প্রভৃতি জীবজন্তুর দেখা মেলে। এছাড়া ফুলের সময়ে প্রচুর রাডোডেনড্রন ও দুস্প্রাপ্য অর্কিডও পাওয়া যায় এই অঞ্চলে।

ছাঙ্গুলেক-নাথুলা :
গ্যাংটক থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে জিপে করে চলে যাওয়া যায় ছাঙ্গু লেক। দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। ১২,৪০০ ফুট উ”চতায় অবস্হিত ছাঙ্গু লেকের চারপাশে বছরের বেশির ভাগ সময়েই থাকে বরফে মোড়া। শীতকালে তো লেকের জল পুরোটাই জমে বরফ হয়ে যায়। ইয়াকের পিঠে চড়ে অনেক অনেক পর্যটকই ঘুরে বেড়ান লেকের চারপাশ। পায়ে হেঁটেও ঘুরে নেওয়া যায়। একটা ক্যাফেটেরিয়াও আছে লেকের পাশে। ছাঙ্গু লেক ছাড়িয়ে কিছুদূর এগোলে পথে পড়বে বাবামন্দির। বাবা হরভজন সিং নামে এক ভারতীয় সেনানী, চিন-ভারত যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশেই এই মন্দির। এর কাছেই ঘুরে নেওয়া যায় আরেকটি সুন্দর জায়গা টুকলা। এখান থেকে হিমলচূড়ার শোভা খুবই মনোরম।
ছাঙ্গু লেক, বাবামন্দির, প্রতিদিন যাওয়া গেলেও নাথুলা যাওয়ার পারমিট মেলে সপ্তাহে মাত্র চার দিন বুধ, বৃহস্পতি, শনি ও রবিবার। ছাঙ্গু থেকে পুরোটাই চড়াই রাস্তা পৌঁছায় ১৪,৪৫০ ফুট উঁচু নাথুলায়। এখানেই ভারত-তিব্বত সীমান্ত।

লেখক : প্রাবন্ধিক; রূপনগর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!