পাঠাগার বার্তা ডেস্ক :অগ্নিঝুঁকিতে থাকা বঙ্গবাজার মার্কেট ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করার উদ্যোগ চার বছরেও বাস্তবায়ন করতে না পারায় আক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে আজ ব্যবসায়ীদের এই ক্ষতি নাও হতে পারত।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাধ্যমত সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সরকারপ্রধান। সেই সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত থাকার সময় ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলার ঘটনায় প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ। বলেছেন, যারা হামলা করেছে এবং হামলার নির্দেশ দিয়েছে, তাদেরকে শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈদে বিক্রির জন্য মজুদ করা কোটি কোটি টাকার পণ্য পুড়ে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর দিন বুধবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
বাসস জানায়, অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু নির্মাণে নেওয়া ঋণ পরিশোধের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৩১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার চেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
১৯৯৫ ও ২০১৮ সালে বঙ্গবাজারে দুই দফা অগ্নিকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় দফায় আগুনের পর তার সরকার পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবাজার নির্মাণের ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু এর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাজার নির্মাণের প্রক্রিয়া স্থগিত করায় তা আর করা যায়নি।
তিনি বলেন, “মার্কেটটি নির্মিত হলে হয়ত এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না।”
মঙ্গলবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “২০১৯ সালে বঙ্গমার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও তারা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। তারা ছাড়াও অন্য কোনো সংস্থা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।”
পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার জন্য মার্কেটটি ভেঙে নতুন মার্কেট করার উদ্যোগ নেওয়া যায়নি।
আগুনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রমজানে ব্যবসায়ীদের কষ্ট ও কান্না সহ্য করা যায় না। আমি আগেই বলেছি- আমরা সাধ্যমত সাহায্য করব। আমরা ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মূল্যায়ন করব।”
মঙ্গলবারের এই আগুনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজারের মূল মার্কেটে থাকা বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায়।
বঙ্গবাজারের উত্তর পশ্চিম কোণে সাততলা এনেক্সকো টাওয়ার, তার পূর্ব পাশে মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেটও পুড়েছে। আগুন বঙ্গবাজারের পশ্চিম পাশের সড়কের অপর প্রান্তের দুটি মার্কেটেও ছড়ায়। এ কয়েকটি মার্কেট মিলিয়ে ৫ হাজারের মত দোকান রয়েছে; পুড়েছে তার অধিকাংশ।
এতে ৫ হাজারের মত ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে একটি হিসাব দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের উঠে দাঁড়াতে ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আট সদস্যের কমিটি করেছে ডিএসসিসি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে বহু ব্যক্তি ও সংগঠন ব্যক্তিগতভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছন।
হামলাকারীদের শনাক্ত করা হবে
প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলা নিয়েও।
ফায়ার সার্ভিস যখন বঙ্গবাজারে প্রাণপাত চেষ্টা করছিল, সে সময় বঙ্গবাজারের উল্টো পাশে বাহিনীটির সদরদপ্তরে হামলা করে কিছু মানুষ। তারা বাহিনীর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের গাড়ি ছাড়াও নতুন একটি ভবনে ভাঙচুর চালায়।
শেখ হাসিনা বলেন, “অগ্নিকাণ্ড শুরুর পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও দুপুরে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার ব্রিগেড অফিসে হামলা চালায়।
“যারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার ব্রিগেড সদর দপ্তরে প্রবেশ করে অগ্নিনির্বাপক যানবাহনের ক্ষতি করেছে, তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অগ্নিনির্বাপক যানবাহনের ক্ষতি করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই শনাক্ত করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভবিষ্যতে অগ্নিনির্বাপক যানবাহন, ফায়ারম্যান বা কোনো সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাদের হামলা করতে দেখা যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের হামলা সহ্য করা হবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply