পাঠাগার বার্তা ডেস্ক : বাইরের বারান্দায় বিশালাকার বইয়ের স্তূপ পড়ে আছে। কাদামাটি আর ভেজা ভাব বইয়ের গায়ে লেগে আছে। ভবনের ভেতরে এলোমেলো পড়ে আছে অসংখ্য বই। চেয়ার-টেবিল ও মেঝেতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মেঝেতে আধা ইঞ্চি পরিমাণ কাদা মাটি জমে আছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে ও জ্ঞান আহরণ করতে তৈরি করা কর্নারটি টেবিল-চেয়ার বইপত্র কাদামাটি আর পানিতে ভিজে একাকার। এটি বান্দরবান জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের চিত্র।
যারা গণগ্রন্থাগারটিতে নিয়মিত যেতেন তাদের চোখে আজ অচেনা এই জ্ঞানভান্ডার। বন্যার পানি যেন গণগ্রন্থাগারটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানি লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশ করে এমন অবস্থা করেছে। গত মঙ্গলবার বন্যার পানি সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে ঢুকে পড়ায় কম্পিউটার, বেশিরভাগ, নথিপত্রসহ অসংখ্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, হাজার হাজার বই লাইব্রেরির বারান্দায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সবগুলো বইয়ে কাদামাটি লেগে আছে। লাইব্রেরির ভেতরে আধা ইঞ্চি কাদামাটি জমে আছে। সারি সারি বইয়ের সেলফ মাটিতে পড়ে আছে। চেয়ার-টেবিল এলোমেলো পড়ে আছে। তিনজন লোক কাদামাটি থেকে বই সংগ্রহ করছেন। বন্যার পানির ক্ষত এখনও চারদিকে। পানির চিহ্ন দেখে বুঝা যায় বন্যার পানি প্রায় নয় ফুট উচ্চতায় গ্রন্থাগারে ঢুকেছিল। এতটুকু উচ্চতায় বন্যার পানি উঠবে তা কল্পনা করা যায় না বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
বান্দরবান সরকারি কলেজে অনার্স পড়ুয়া দীপায়ন শীল বলেন, ‘বান্দরবানে এমন বন্যা আমার জীবনে দেখিনি। আমি নিয়মিত লাইব্রেরিতে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। এখন কোথায় গিয়ে সময় কাটাব জানি না। বেশির ভাগ বই পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।’
বান্দরবান সরকারি গণগ্রন্থাগারের ইনচার্জ মা শৈ সিং বলেন, ‘সোমবার রাতে বন্যার পানি আসতে থাকে। আমরা রাতের মধ্যে চেষ্টা করেছি বইগুলো নিরাপদ জায়গায় রাখতে। কিন্তু পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালেও লাইব্রেরিতে পানি উঠেছিল। সেই হিসাব করে নিচে থাকা বইগুলো নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কল্পনার বাইরে পানি উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘লাইব্রেরিতে ৩৪ হাজার বই আছে। ২০১৯ সালে প্রায় ৩ হাজার বই নষ্ট হয়ে যায়। যদি লাইব্রেরি ভবনটি দুই তলাবিশিষ্ট হতো তাহলে সম্পূর্ণ বই রক্ষা করা যেত।’
Leave a Reply