1. admin@pathagarbarta.com : admin :
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের দুইদিনব্যাপী সাহিত্য পর্যটন মিশন মহেশখালী কক্সবাজার ৮ ও ৯ নভেম্বর নবীগঞ্জে শারদ সংকলন ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত স্বপ্নবিলাস উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্যোগে পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সৌম্যেন অধিকারীর কণ্ঠে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্মরণে প্রথম বাংলা গান মিডল্যান্ডস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ ইউকে সভায় বার্মিংহামে বিজয় দিবস পালনের সিদ্ধান্ত লেখা আহবান ইউকের বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভা অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার লন্ডনে আনন্দ ও উৎসবে দ্বাদশ বাংলাদেশ বইমেলা এবং সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত

বার বার লোকালয়ে সুন্দরবনের বাঘ – রহস্য কী?

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
  • ১৪৩ বার পঠিত

লিয়াকত হোসেন খোকন

প্রায়ই লোকালয়ে সুন্দরবনের বাঘ আনাগোনার খবরাখবর পত্রপত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে। লোকালয়ে বাঘ আসার পিছনে বেশ কিছু নেপথ্যে কারণও দায়ী । তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। নচেৎ সুন্দরবন থেকে বাঘ চিরতরে হারিয়ে গেলে বাঙালি কি নিয়ে আর গর্ব করবে? জল -জঙ্গল -জীবজন্তু, এই নিয়েই সুন্দরবন এবং এই জঙ্গল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত। সুন্দরবনে মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম ঘন জঙ্গলে ঢুকে মাছ শিকার, মধু সংগ্রহ ইত্যাদি, কাজে জঙ্গলে মানুষদের যেতে হচ্ছে, যা কিনা মানুষের এলাকা নয়, সে এলাকা হলো বাঘের এলাকা।

ডারউইনের বিবর্তনবাদ অনুযায়ী, এই পৃথিবীতে খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত হওয়ার ফলে প্রত্যেক প্রাণীকেই অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। সেই হিসাবে বলা যায়, জনসংখ্যা যত বেড়েছে, ততই মানুষ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য জঙ্গল কেটে জীবজন্তুর এলাকা ছোট হচ্ছে। ফলে জীবজন্তুরা খাদ্যের জন্য হানা দিচ্ছে কাছাকাছি জনবসতি গুলোতে। অবশ্য এই জনবসতিগুলো এক সময়ে ছিল সুন্দরবনেরই অংশ। মানুষ তাদের প্রয়োজনে কেটেকুটে ছাফা করে সেখানে গড়ে তুলেছে বাড়িঘর। আবার সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গড়ে তুলেছে নগরায়ণ। সুন্দরবনের আয়তন কমে যাওয়ার পেছনে রাষ্ট্র ও জনগণ কেউ পিছিয়ে নেই।
এছাড়া আমপান, ইয়াসের পরে বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের নোনাপানি সুন্দরবন এলাকার মিষ্টি পানির খালে মিশে যাওয়ায়, সেই পানি বন্য জীবজন্তুর খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বন্য জীবজন্তুরা কাছের লোকালয়ে আসছে খাদ্য ও পানির সন্ধানে। এখন প্রশ্ন হল – কেন ঘন জঙ্গল ছেড়ে বাঘের বেরিয়ে আসা?

এর কয়েকটি কারণ হতে পারে। বন দপ্তরের বোঝা উচিত, বন্যপ্রাণীরা সুন্দরবনে অস্বস্তিতে রয়েছে। নানা দিক থেকে এই অস্বস্তি। বিশেষকরে এদের খাদ্যের উপর সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে। বন আর মোটেও নিরাপদ নয়। আশপাশে বহু মানুষ সুন্দরবন কেটে কুটে গাঁ -গঞ্জ গড়ে তুলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্র বন্যপ্রাণীদের জন্য বিপজ্জনক করে তুলছে।

স্বভাবতই কমে আসছে জঙ্গলের ঘনত্ব। ফলে খাদ্য সংগ্রহে বিঘ্নিত হচ্ছে দক্ষিণরায় বা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। পাশাপাশি ঝড়বৃষ্টি, বন্যা, জলস্রোতের ফলে যথেষ্ট সংখ্যক হরিণ, শূকর, বন মুরগি ইত্যাদির মৃত্যু ঘটায় খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ মাত্রেই।
সরকার সংরক্ষিত অরণ্যে মানুষ নামের ঘুঘুর বাসা ভাঙতে পারলেই সুন্দরবনের জীবজন্তুরা নিরাপদে তাদের নিজস্ব বাসস্থানে থাকতে পারবে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – সুন্দরবনের বাঘ নোনা অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও ওরা তেষ্টা মেটায় মিঠে পানিতে। দেখা দরকার জঙ্গলের ভিতরে বৃষ্টির পানিতে পুষ্ট জলাশয়গুলো বন্যায় নোনাপানিতে ভেসে গিয়ে এখনও লবনাক্ত হয়ে আছে কিনা। যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে শুধু শিকার নয়, তেষ্টা মেটাতে জীবজন্তুরা মিঠে পানির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এক্ষেত্রে করণীয় -জঙ্গলের কোণ ঘেঁষা অঞ্চলে জায়গায় জায়গায় মিঠে জলাশয় খনন করা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভেবে দেখবেন কী?

ঘূর্ণিঝড় ‘ ইয়াস ‘ আছড়ে পড়ে প্রায়শই সুন্দরবনে। কিন্তু ম্যানগ্রোভ জঙ্গল থাকায় ক্ষতি অনেকটাই কম হয়। সুন্দরবনকে বারবার বাঁচাচ্ছে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। তবুও শিক্ষা হয়নি এলাকার কতিপয় অসাধু মানুষের। প্রকাশ, কিছু মানুষ আইনকে অমান্য করে ম্যানগ্রোভ নিধন করছে। অভিযোগ, মাছের ভেড়ি বানানোর জন্যই চলছে এই কাজ। অবশ্য এ অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনের অংশে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই ওই রাজ্যের বাসন্তী থানা সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
প্রকাশ, ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের পর বেশ কয়েক দিন ধরেই সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে মেশিনে মাটি কেটে মাছের ভেড়ি তৈরির কাজ চলছে। প্রায় ১৪০০ বিঘা জমি জুড়ে মাছের ভেড়ি করা হচ্ছে।

এই যদি হয় পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের অবস্থা তাহলে বাংলাদেশের সুন্দরবনের অংশে যারা বসবাস করছেন নিশ্চয়ই তারা দুধে ধোয়া তুলসীপাতা নয়। সুন্দরবনে কোনোকালে মানুষের বসতি ছিল না – যুগ যুগ ধরে কিছু অসাধু লোক সুন্দরবনের কত ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে বসতি গড়ে তুলেছে ! সে কথা কেউ কি মনে রেখেছে? সময় আছে, সুন্দরবনের বসবাসকারীদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হোক – নচেৎ সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ বড়ই অন্ধকার! সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলছি, অতীতের সুন্দরবনের আয়তন ও আজকের সুন্দরবনের আয়তনের মধ্যে কত পার্থক্য – এ নিয়ে ভাবুন। কমেছে কত তার হিসাব নিকাশ করুন। আমার ভালবাসা সুন্দরবন। আমার প্রিয়তমা সুন্দরবন – দ্বিখণ্ডিত। বাংলাদেশেও আছে – রয়েছে আবার পশ্চিমবঙ্গেও বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল এই সুন্দরবন।
এর নিকটবর্তী শহরগুলো -খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট। অপরূপা সুন্দরী সুন্দরবনের আয়তন ১,৩৯,৫০০ হেক্টর। বলা হয় – ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট লিপি। সুন্দরবন বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়কর – প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম এই
সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জুড়ে সুন্দরবনের বিস্তৃতি নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এই সুন্দরবন – বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমিও এই সুন্দরবন। ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে আমাদের এই বাংলাদেশে আর বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। আমার বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই সুন্দরবনে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল -কত প্রাণী – চিত্রা হরিণ বাঘ কুমির সাপ ও নানা প্রজাতির পাখি। সুন্দরী গাছ থেকে নাম হয়েছে সুন্দরবনের বনজ বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে – সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি, গরান, কেওড়া শুধু তাই নয়, রয়েছে ৩৩৪ টি প্রজাতির উদ্ভিদ। শন নল খাগড়া গোলপাতা দেখে দেখে দু’নয়ন ভরে যায় কি যেন এক আনন্দে মনে হয় – ” বনে বনে ফুল ফুটেছে – দোলে নবীন পাতা “। আছে কচ্ছপ গিরগিটি কাঁকড়া চিংড়ি শামুক। বিলুপ্ত হয়েছে – বুনো মহিষ, পারা হরিণ, বুনো ষাঁড়, গন্ডার, বার শিঙ্গা, চিতাবাঘ, সাদা মানিক, জোড়া কান, ঠুনি, বোঁচা হাঁস, গগনবেড়, তিতির, শকুন – আরও কত কি। এ জন্য দায়ী কে ?
বলি, আছে বাঘ – কিন্তু মেলে না বাঘের দেখা
প্রশ্ন জাগে, কোথায় গেল বাঘ, তখন মনে পড়ে বাঘা আর বাগেরহাটের কথা। রাজশাহীর বাঘায় একদা ছিল বনজঙ্গল – বসবাস করতো হেথায় বাঘ আর বাঘ। বনজঙ্গল উজাড় করে মানবজাতি – তারা চিরনির্মূল চিরধ্বংস করলো বনাঞ্চল। মারলো হেথায় হাজার হাজার বাঘ – গড়লো জনপদ। -বাগেরহাটেও তাই হয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে মানুষ জঙ্গল সাফা করে করছে চাষাবাদ আর গড়ে তুলছে বাড়িঘর দোকানপাট হাটবাজার প্রতিষ্ঠান। এই যদি হয় চরিত্র তবে বাঘ সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী এই ধরনীতে থাকবে কি ভাবে? কি আর বলবো- বলার ভাষা পাইনা খুঁজে বড় অসহায়ত্ব ও বিফলতা নিয়ে বলি আমার ভালবাসা সুন্দরবন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, রূপনগর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!