স্টাফ রিপোর্টার : হবিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (বিকেজিসি) এর পুনর্মিলনী গতকাল শুক্রবারে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। জেলার সবচেয়ে প্রাচীন নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শত শত শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাহিত্যিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে। দুইজন নারী সংসদ সদস্যও এই বিদ্যালয় থেকেই বেড়ে উঠেছেন। আলোকিত মানুষ গড়ার এই প্রতিষ্ঠানটি দেখতে দেখতে শত বছর অতিক্রম করলো। শত বছরের এই মহেন্দ্রক্ষণটি বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ‘স্মৃতি রোদ্দুরে’ শিরোনামে পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাঙ্গিয়ে তুলেছিলেন শুক্রবার।
শুক্রবার সকাল থেকেই প্রাক্তন ছাত্রীদের ক্যাম্পাসজুড়ে হই-হুল্লোড়, সাথে প্রাক্তন ছাত্রীদের পরিবার ও তাদের সন্তানের পদচারণায় চারদিকেই ছিলো উৎসবের আমেজ। বর্তমান আর প্রাক্তনদের মেলবন্ধনে নতুন এক উল্লাসে মেতে উঠে বিকেজিসির ছাত্রীরা। বিকেজিসি শতবর্ষে পুনর্মিলী ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত হয় এ মিলনমেলার।
ভোরের আলো ফুটে ৯টা বাজলেও হবিগঞ্জ শহরে দেখা নেই সূর্যের। কিন্তু প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে শহরের জালাল স্টেডিয়ামে পূনর্মিলনীতে অংশ গ্রহন করে হাজার হাজার বর্তমান প্রাক্তন ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালীর। জালাল স্টেডিয়াম থেকে শুরু হয় র্যালীটি। পরে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয় র্যালিটি। পরে বেলা ১২টার দিকে শুরু হয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
র্যালি শেষে জালাল স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি হিসাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বেলুন উড়িয়ে পুনর্মিলনীর উদ্বোধন করেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এডভোকেট মো. আবু জাহির। স্কুল থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি পাশ করা বন্দনা দত্তের সভাপতিত্বে ও শতবর্ষ পূণর্মিলনী উৎসবের আহবায়ক রুমা মোদকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, সরকারী বৃন্দাবন কলেজের অধ্যক্ষ ইলিয়াছ বখত চৌধুরী জালাল, বিদ্যুৎ বিভাগের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কবীর সহ আন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপি উৎসবে সাবেক কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
পরে অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা সভার। এতে বিকেজিসি স্কুলের প্রাক্তন বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ স্মৃতিচারণ করেন। এদের মধ্যে বিকেজিসি শতবর্ষে পুনর্মিলনী ২০২৩ উদযাপন কমিটির আহবায়ক রুমা মোদক, সদস্য সচিব জায়মা জারনাজ সহ কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উৎসব কমিটির আহবায় রুমা মোদক জানান, ১৯৬০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে পড়শোনা করা শিক্ষার্থীদের এতে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশ, বিদেশের ১হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেন। তবে উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ৪/৫ হাজার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী।
১৯২৩ সালের ১ জানুয়ারী হবিগঞ্জে নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে গোপাল চন্দ দাস কতৃক প্রদত্ত ৩.৫ একর জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বসন্ত কুমারী ছিলেন গোপাল চন্দ্র দাসের সহধর্মিণী। ইংরেজী ও সংস্কৃতকে প্রাধান্য দিয়ে এম.ই (মিডল ইংলিশ স্কুল) নামে পরিচিতি পায়। এখানে ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত পড়ানো হত। তখন স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মিস এন্ডুস নামে এক বৃটিশ নারী। স্কুলটি সরকারীকরণ করা হয় ১৯৬৭ সালের ৩১ জুলাই। ২০১১ সালে স্কুলে ডাবল শিফট চালু করা হয়।
Leave a Reply