অসমাপ্ত আত্মজীবনী
শেখ মুজিবুর রহমান
(মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিক প্রকাশ)
পর্ব-১
বন্ধুবান্ধবরা বলে, “তোমার আত্মজীবনী লেখ”। সহকর্মীরা বলে, “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, “বসেই তো আছ লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম লিখতে যে পারি না; আর এমন কি করেছি যা যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।”
একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।
হঠাৎ মনে হল লিখতে ভাল না পারলেও ঘটনা যতটুকু মনে আছে লিখে রাখতে আপত্তি কি? সময় তো কিছুটা কাটবে।বই ও কাগজ পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে চোখ দুইটাও ব্যথা হয়ে যায়। তাই খাতাটা নিয়ে লেখা শুরু করলাম। আমার অনেক কিছুই মনে আছে। স্মরণশক্তিও কিছুটা আছে। দিন তারিখ সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে, তবে ঘটনাগুলি ঠিক হবে বলে আশা করি। আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু– আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।
**
আমার জন্ম হয় ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। আমার ইউনিয়ন হল ফরিদপুর জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সর্বশেষ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশেই মধুমতি নদী। মধুমতি খুলনা ও ফরিদপুর জেলাকে ভাগ করে রেখেছে।
টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশের নাম কিছুটা এতদঞ্চলে পরিচিত। শেখ পরিবারকে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার বলা যেতে পারে। বাড়ির বৃদ্ধ ও দেশের গণ্যমান্য প্রবীণ লোকদের কাছ থেকে এই বংশের কিছু কিছু ঘটনা জানা যায়।
আমার জন্ম হয় এই টুঙ্গিপাড়া শেখ বংশে। শেখ বোরহানউদ্দিন নামে একধার্মিক পুরুষ এই বংশের গোড়াপত্তন করেছেন বহুদিন পূর্বে।
(চলবে)
Leave a Reply