1. admin@pathagarbarta.com : admin :
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মৌলভীবাজারে শিশু কানন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত স্বরূপচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির স্মৃতিচারণ অনুষ্টান সরকারি নিবন্ধন পেল নবীগঞ্জের সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সনাতন-দীননাথ যুব ও সমাজকল্যাণ সংস্থা’ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস গ্রন্থাগার’ পরিদর্শন   নবীগঞ্জে ‘সনাতন-দীননাথ যুব ও সমাজকল্যাণ সংস্থা’ আয়োজিত মতবিনিময় সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত  মৌলভীবাজারে ইউনাইটেড ক্লাব ২০২৫-২০২৭ কার্যকরী পরিষদ গঠন লন্ডনে নন্দন আর্টসের আয়োজনে গজল নাইট ২০২৫’ অনুষ্ঠিত সিলেটে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালিত শ্রীমঙ্গলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চারদিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলা শুরু হচ্ছে কাল নিলফামারীর মুক্তিযোদ্ধা দেলওয়ার রহমান গ্রন্থাগারের উদ্যোগে সান্ধ্যকালীন সাহিত্য আড্ডা 

বিলুপ্তির পথে জারি গান

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২২
  • ২০৩ বার পঠিত

বিলুপ্তির পথে জারি গান
লিয়াকত হোসেন খোকন

জারি গানের বেশির ভাগে উঠে আসত সমসাময়িক নানান বিষয়। সেই জারি গান আজ বিলুপ্তির পথে। আজও আমাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা সেই জারি গানটির কথা। ‘ও যত হিন্দু মুসলমান, পাকিস্তানের দুঃখ জারি/শোনো তার বিধান,/ও ও ও ও পশ্চিম পাকিস্তানের মন্ত্রী ইয়াহিয়া খান/পূর্ব পাকিস্তানের লিডার মুজিব রহমান…. ’ সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের তদানীন্তন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে লড়াই ও অসহায় মানুষদের দুর্গতির কথা এই গানের পরতে পরতে উঠে এসেছিল। সম্পূর্ণ গানটায় মুক্তিযুদ্ধের নিদারুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছিল। এই তো বছর ত্রিশেক আগেও জারিগানের এক শিল্পী মনোরুদ্দিন মাস্টারমশাই প্রথাগত জারিগান থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব একটি ঘরানা তৈরি করেছিলেন যা একেবারে স্বতন্ত্র। তিনি জারিগান ও সম্প্রীতির গানের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন, যেমন -‘মদিনাতে এলো মুহাম্মদ, মথুরাতে এলো শ্যাম / ইমাম খেলা খেলে রসুল, লীলা খেলে ঘনশ্যাম….. ’ এই গানটি আজও মানুষের মুখে মুখে। জারি সারি গান গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে আনাচে -কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা স্থানভেদে আলাদা আলাদা। প্রত্যেকটির নিজস্ব স্বতন্ত্রতা আছে, নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। যা আজও কিছু মানুষ পরম্পরায় বহন করে চলেছেন। একসময় সারা বাংলাদেশ জুড়ে শহরে -গ্রামে জারি সারি গানের আসর হত সারারাত ধরে। আজ তা কোথায়? কোথাও আর হচ্ছে না এই গানের আসর – বর্তমান সময়ে বিভিন্ন লোকালয় গান যেমন মানিক পীরের গান, জারিগান, সারিগান, ঝাপান গান হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গ্রামীণ সংস্কৃতি -ঐতিহ্যও আজ বিলুপ্তির পথে। এর মূল কারণ হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের এগুলোর প্রতি তীব্র অনীহা। সেই সঙ্গে আর্থ -সামাজিক একটা কারণ রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। তাছাড়া বর্তমান সময় হচ্ছে ইন্টারনেটের যুগ। যন্ত্র নির্ভর সভ্যতায় চাপা পড়ে যাচ্ছে জারি -সারিগান তা বলা যায়। কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর তীরবর্তী অঞ্চল লোকসংস্কৃতির এক উর্বরভূমি – এর তীরবর্তী গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে আছে লোকায়ত বিভিন্ন গান, যাত্রাপালা ইত্যাদি। নৌকাবাইচের মতো খেলাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। বিশেষ করে লোকায়ত বিভিন্ন গানগুলি আজ অস্তিত্ব সংকটের মুখে। এখন এই সব গানের পৃষ্ঠপোষক আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এখনো যারা জারি গান ও সারি গানগুলি বহন করে চলেছেন তাদের সংখ্যা নগণ্য। কিন্তু বড়ো পরিতাপের বিষয় হলো এই গানের যোগ্য উত্তরসূরী পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো তারাই শেষ প্রজন্ম। ফলে তাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাবে এইসব গান। তাছাড়া বেশির ভাগ গানও মুদ্রিত নয়। লোকমুখে প্রচলিত ও প্রচারিত। লিখিত নেই বললেই চলে। তাই এইসব গানগুলো সংরক্ষণের জন্য মুদ্রিত একান্ত জরুরি। রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে সুরও ধরে রাখা দরকার। কোথায় হারিয়ে গেল সেই সারি গান – ” ও কে কান্দেরে নদীর কিনারায়/আওলা চুল বাতাসে ওড়ে ঘোমটা নাই মাথায়/কেন এসে কাঁদে ঘাটে/স্বামী কিগো নাইকো ঘরে “। এ গানে ছিল না কোনরূপ কৃত্রিমতা। এ সব গান যারা গাইতেন তাঁরা ছিলেন এক একজন স্বভাব কবি। শুধু সারি গান নয় জারি গানও নৌকাবাইচে চড়নদাররা গাইতো তা শোকের হলেও। জারিগানের মাধ্যমে তারা কারবালার কাহিনীর মর্মস্পর্শী ঘটনা গানের বর্ণনা করতো। এ এক অন্য অনুভূতি। চড়নদাররা গান গেয়ে মন জয় করতো সকলের। যতীন গায়েনের এমন একটি জারিগান হল – ‘সত্য কথা কহ দুলদুলি ও হোসেন আলি/কোথায় গেল আমার প্রাণ ধন/ ও ও ও ওরে কাল সকালে বিদায় হয়ে রণে হলো খাড়া/রণে আমার কাজ নেই যাদু রাখো তোমার ঘোড়া…।’ এরকম বহু গান যেমন জারি, সারিগান নয়, বোলান, ঝাপান গানেরও সুখ্যাতি ছিল একসময় যা আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অসংখ্য গ্রাম্য লোকসংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের জনজীবন থেকে, যার অস্তিত্ব হয়তো আর পাওয়া যাবে না যদি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সচেতন না হন। সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি, তাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবার জারিগান, সারিগানের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা করলে এসব লোকায়ত গানগুলি আবার জনসমক্ষে ফিরে আসবে। বাঁচবে জারিগানের শিল্পীরা সেই সঙ্গে টিকে থাকবে জারিগান-সারিগান। জারিগান যাতে বাংলাদেশ থেকে যাতে বিলুপ্ত না হয় -এ ব্যাপারে আবারও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক : প্রাবন্ধিক; রূপনগর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!