1. admin@pathagarbarta.com : admin :
শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সনাতন-দীননাথ : আপন আলোয় উদ্ভাসিত বৃটেনের কার্ডিফ বাংলা স্কুল প্রতি শনিবার ও রোববার খোলার সিদ্ধান্ত   প্রসঙ্গ : স্থানীয় সরকারের সার্কেল পদ্ধতি ও সরপঞ্চ ব্যবস্থা বইপাঠ প্রতিযোগিতার সনদ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত মেধাবিকাশ গণগ্রন্থাগারে পাঠচক্র অনুষ্ঠিত বেসরকারি গণগ্রন্থাগারের অনুদানের জন্য দরখাস্ত আহবান একজন এনামুল হাবীব ও আমাদের গ্রন্থাগার কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে- ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্মূল কমিটির যৌথ সভা কোটা আন্দোলনকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী স্লোগানের নিন্দা জানিয়েছে জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকে সমাজকর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সংবর্ধনা

ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মদিন আজ

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩
  • ৮৮ বার পঠিত

পাঠাগার বার্তা ডেস্ক : আজ ২২ মার্চ। ১৮৯৪ সালে আজকের এইদিনে ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী বীর মাস্টারদা সূর্যসেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মহান বীরের জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল।

পলাশীর প্রান্তরে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসক ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ১৯০ বছর ইংরেজ বাহিনী এ দেশকে শাসন ও শোষণ করার পর ১৯৪৭ সালে বিতাড়িত হয়। ব্রিটিশ শাসকদের বিতাড়নের জন্য অনেক প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল এ দেশকে। মাস্টারদা সূর্যসেন ছিলেন এমন হাজারও বীর সেনার অন্যতম। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে পথ দেখিয়েছিলেন সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সাহসী যোদ্ধারা, ইতিহাসে তা ছিল একটি বিরল ঘটনা।

ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী সূর্য সেন বা সূর্যকুমার সেন ১৮৯৪ সালে চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রাজমণি সেন এবং মায়ের নাম শশীবালা। শৈশবেই মা-বাবাকে হারান। বেড়ে ওঠেন কাকা গৌরমনি সেনের কাছে। সূর্যসেন ছেলেবেলা থেকেই খুব মনোযোগী ও ভাল ছাত্র ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন স্থানীয় দয়াময়ী বিদ্যালয়ে। ১৯১২ সালে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে।

১৯১৬ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কৃঞ্চনাথ কলেজে বিএ পড়ার সময় তিনি শতীশচন্দ্র চক্রবর্তী কর্তৃক বৈপ্লবিক আদর্শে দীক্ষিত হন। ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন। পাশাপাশি ন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরিচিত মহলে আখ্যা পান ‘মাস্টারদা’ হিসেবে। বিপ্লবীরা তখন অনুশীলন ও যুগান্তর—এ দুই দলে বিভক্ত ছিল। সূর্য সেন দল দুটিকে ঐক্যবদ্ধের চেষ্টা করেন।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্যসেনের গড়া ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’ চট্টগ্রামকে স্বাধীন করার লড়াই শুরু করে। ওইদিন রাতে চারটি বাড়ি থেকে ৪টি দল অপারেশনে বের হয়। সেই রাতেই ধুম রেলস্টেশনে একটা মালবহনকারী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। একদল বিপ্লবী আগে থেকেই রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে নেয়। এর ফলে চট্টগ্রাম সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

অন্য একটি দল চট্টগ্রামের নন্দনকাননে টেলিফোন এবং টেলিগ্রাফ অফিস আক্রমণ করে। হাতুড়ি দিয়ে তারা সব যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে দেয় এবং পেট্রোল ঢেলে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

আরেকটি দলে সূর্যসেন ও অন্যান্য বিপ্লবীরা আক্রমণ করেন পাহাড়তলীতে অবস্থিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে সরকারি অস্ত্রাগার। অস্ত্রাগারের রক্ষীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধরাশায়ী হল। অত্যাচারী ইংরেজরা পালাল গভীর সমুদ্রে। অধিকৃত হল সে অস্ত্রাগার।

সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লবীরা দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেয়। এই আক্রমণে অংশ নেয়া বিপ্লবীরা দামপাড়া পুলিশ লাইনে সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ব্রিটিশ দাম্ভিকতা, অত্যাচার-নিপীড়নের প্রতীক ‘ইউনিয়ন জ্যাক’কে বিপ্লবীরা ভূলুণ্ঠিত করে উড়িয়ে দেয় স্বাধীনতার পতাকা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম স্বাধীন হলো চট্টগ্রাম। মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে সূর্যসেনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সূর্যসেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।

মাস্টারদা জানতেন এ স্বাধীনতা সাময়িক। ব্রিটিশ শক্তি চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে বিপ্লবীদের। কিন্তু দেশপ্রেমে বলিয়ান বিপ্লবীদের প্রাণপণ লড়াইয়ের কাছে হার মানলো আধুনিক অস্ত্রে সাজানো প্রশিক্ষিত ইংরেজ সৈন্য। বীর শহীদদের প্রতি শেষ অভিবাদন জানিয়ে পাহাড় ত্যাগ করলেন বিপ্লবীরা।

পরবর্তী অপারেশন ইউরোপীয়ান ক্লাব। ক্লাবের বাইরে লেখা ছিল ‘ডগস অ্যান্ড নাটিভস আর নট অ্যালায়েড’ এবং ভেতরে চলতো মদ, নৃত্য আর বিপ্লবীদের ধরার পরিকল্পনা। মাস্টারদা সূর্যসেনের আর এক সহযোদ্ধা প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ক্লাব আক্রমণ করা হয়। অপারেশন শেষে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন বীরকন্যা প্রীতিলতা।

পরবর্তীতে ইংরেজ প্রশাসন সূর্যসেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখে। ১৯৩২ হতে ১৯৩৩ সালের পুরো শীতকাল সূর্যসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা কঠিন সময় পার করেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি গৈড়লা নামক গ্রামে আশ্রয় নেন সূর্যসেন ও বিপ্লবীরা। কিন্তু নেত্র সেন নামে এক বিশ্বাসঘাতক অর্থের লোভে ব্রিটিশ সৈন্যদের কাছে মাস্টারদা সূর্যসেন কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তা জানিয়ে দেয়।

ফলশ্রুতিতে ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েকজন সঙ্গীসহ সূর্য সেন ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সূর্য সেনের নিজের হাতে লেখা অর্ধসমাপ্ত আত্মজীবনীর খাতা উদ্ধার করে পুলিশ। সেই খাতার উপর লেখা ছিল ‘বিজয়া’। বিচারের সময় বিজয়াতে লেখা তার কথাগুলো বিপ্লব এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সূর্যসেন গ্রেপ্তার হবার পর তারকেশ্বর দস্তিদার দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৩০ সালের ১৮ মে আনোয়ারা থানার গহিরা গ্রামে পুলিশ আর মিলিটারির সাথে সংঘর্ষের পর তারকেশ্বর দস্তিদার গ্রেপ্তার হোন। ১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে বিপ্লবীরা জেল থেকে সূর্য সেনকে মুক্ত করার জন্য কয়েকবার চেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রতিবারই তাদের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।

সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদারকে বিচারের জন্য ইন্ডিয়ানন পেনাল কোডের ১২১/১২১ এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৯৩৩ সালে ১৪ আগস্ট এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনাল সূর্যসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তারকেশ্বরকেও একই দণ্ড দেয়া হয়।

১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অপরাধে মাস্টারদা সূর্যসেন ও তারকেশ্বরের ফাঁসি কার্যকর করেছিল বৃটিশ শাসকদল। ফাঁসির আগে চট্টগ্রাম কারাগারে হাতুড়ি দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছিল মাস্টারদা সূর্যসেনের ওপর। এরপর অর্ধমৃত অবস্থায় সূর্যসেন ও তার সহযোগী তারকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছিল। পরদিন ১৩ জানুয়ারি লাশ দুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে চট্টগ্রামের ৪ নম্বর স্টিমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মৃতদেহ দু’টোকে ব্রিটিশ ক্রুজার জাহাজে করে গভীর সমূদ্রে নিয়ে মৃতদেহের সাথে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর ডুবিয়ে দেয়া হয়।

সূর্য সেনের স্মরণে কলকাতা মেট্রো ও বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয়েছে ‘মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশন’। এ ছাড়া তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে আবাসিক হলের নামকরণ হয়। একথা চিরসত্য যে, সূর্যসেন বাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম না থাকা সত্ত্বেও দেশপ্রেম ও সাহসের মাধ্যমে কয়েকদিনের জন্যে ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক, বিপ্লবী বীর মাস্টারদা সূর্যসেন’র প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ রবে এই বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!