বিনোদন ডেস্ক : একজন সাধারণ বাঙালী নারী থেকে নায়িকা হয়ে ওঠা, তারপর মহানায়িকা হয়ে অনেকটা নিরবে চলে যাওয়া। যার ভুবন ভোলানো হাসিতে আজও বুদ হয়ে আছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। তার নাম সুচিত্রা সেন। আজ ১৭ জানুয়ারী, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের নবম প্রয়াণ দিবস।
২০১৪ সালের এইদিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুর পর পাবনায় সুচিত্রা সেনের স্মৃতি বিজরিত পৈত্রিক ভিটা দখলমুক্ত হলেও অনেকটা অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। জেলা প্রশাসনের দখলে থাকা বাড়িটি যেন প্রাণহীন। বাড়ির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। বাড়ি উদ্ধারের প্রায় নয় বছর পার হলেও বাড়িতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ গড়ে তোলার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই পাবনাবাসীর।
পাবনার গন্ডি পেরিয়ে অভিনয় গুণে সুচিত্রা সেন হয়ে উঠেছিলেন দুই বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মহানায়িকা। আসল নাম রমা সেন হলেও, চলচ্চিত্রে তার নাম ছিল সুচিত্রা সেন। যার অভিনয়-সৌন্দর্য আজও দাগ কেটে আছে সবার মনে। যার শৈশব কৈশরের একটি অংশ কেটেছে পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে। যে বাড়ির প্রতি কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে সুচিত্রা সেনের ছুটোছুটির দিনগুলো।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারী কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি নায়িকা। তার মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামায়াতের কবল থেকে উদ্ধার করা হয় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি। তারপর থেকে অনেকটা অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে বাড়িটি। সুচিত্রা সেন ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন জেলা শহরের দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সুচিত্রা সেনকে হারানোর শোক যেন এখনও তাড়া করে ফিরছে পাবনার সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সবাইকে। সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক ভিটায় ‘সুচিত্রা স্মৃতি সংগ্রহশালা’ করার দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় সাংস্কৃতিককর্মীদের আক্ষেপের শেষ নেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি প্রলয় চাকী বলেন, তার পৈত্রিক ভিটা ঘিরে যে দাবি বা পরিকল্পনা ছিল তার বাড়িতে সুচিত্রা সংগ্রহশালা আজও পূর্নাঙ্গতা পায়নি। কেন হয়নি, শিল্পকলা একাডেমী বা সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের কি পরিকল্পনা তা জানতে পারছি না। সবমিলিয়ে আমরা হতাশ।
পাবনা থিয়েটার’৭৭ এর সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, সুচিত্রা সেন যে পাবনার মেয়ে তা অনেকেই ভুলতে বসেছে। অনেকে জানেন না বা মানেন না। তাকে নিয়ে গর্ব করতেও অনেকে দ্বিধাবোধ করেন। তার বাড়ি নিয়ে সংগ্রহশালা করার যে প্রত্যাশা ছিল তার কিছুই পূরণ হয়নি।
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু বলেন, সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটিতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ করার জন্য আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেটি আজও সেই প্রস্তাবনা হিসেবে তাদের কাছে পড়ে আছে। কোনো উদ্যোগ নেই। জেলা প্রশাসনের সাথে পরিষদের সমন্বয় বাড়লে ভাল হতো।
পাবনা জেলা প্রশাসক রাসেল হোসেন বলেন, সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে স্মৃতি সংগ্রহশালা করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেটি এখনও প্রক্রিয়াধীন। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা না আসলে আমাদের কিছু করার নেই।
এদিকে, সুচিত্রা সেনের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে ‘স্মরণ সভা’র আয়োজন করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার।
Leave a Reply